বিআইডব্লিউটিএ খুলনা অফিস সূত্র জানিয়েছে, খুলনা বিভাগের ৭৮টি নদীর মধ্যে খুলনার হাড়িয়া, ময়ূর, হামকুড়া, কচা, শেলা ও বাগেরহাটের ভোলা, হাওড়া, সড়া, চুনা, যমুনা, রামসাগর, সাতক্ষীরার সোনাই, কুষ্টিয়ার টেকা, নড়াইলের চিত্রা, মাদারীপুরের নিম্ন কুমার, মরাগাঙ ভদ্রাসহ ২৫টি নদী এরই মধ্যে মরে গেছে। এছাড়াও ১০টি নদী শুকিয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। তিনদশক আগেও এসব নদী দিয়ে এ অঞ্চলের পণ্য ও যাত্রী আনা-নেয়া করত। তবে এখন আর এসব নদীতে বড় কোন নৌযান চলাচল করে না।
এছাড়া খুলনা মংলা নৌপথ রূপসা ও পশুর নদীর বুকে জেগে উঠেছে বিস্তীর্ণ চর। বটিয়াঘাটা উপজেলা সংলগ্ন কাজীবাছা নদীতে চর জেগে ওঠায় মংলা বন্দর থেকে মালবাহী কার্গো ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে। পাইকগাছার দেলুটি থেকে পাইকগাছা গড়ইখালিমুখী শিবসা নদীতে বিশাল চর জেগে উঠেছে। ভাটায় এ নদী দিয়ে ইঞ্জিন চালিত নৌকাও চলতে পারে না।
খুলনা থেকে এখন মাত্র খুলনা-মদিনাবাদ, খুলনা-নীলডুমুর, খুলনা-জোড়সিং রুটে লঞ্চসহ ভারি নৌ চলাচল অব্যাহত রয়েছে। দেড় দশক আগেও অন্তত ১৫টি রুটে লঞ্চসহ ভারি নৌযান চলাচল করত। খুলনার উত্তরে অভয়নগর-নওয়াপাড়া ছাড়া অন্য কোন রুটে কার্গো বা মালবাহী নৌযান চলাচল করে না।
এ অবস্থা বিবেচনায় নদী খননের প্রস্তাব পাঠিয়েছে খুলনা বিআইডব্লিউটিএ কর্তৃপক্ষ। নৌ-নিরাপত্তা ও ট্রাফিক বিভাগে পাঠানো এক পত্রে কমপক্ষে ২০ পয়েন্ট দ্রুত ড্রেজিংয়ের আবেদন করা হয়েছে। অন্যথায় বন্দরের কার্যক্রমে স্থবিরতা দেখা দেবে বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
ড্রেজিং করার স্থানগুলো হচ্ছে-খুলনা-নীলডুমুর নৌ-পথের হড্ডা, নলিয়ান, ঘুগরাকাঠি, মনিপুর, কুড়িকাউনিয়া, মদিনাবাদ, পাতাখালী। খুলনা জোড়শিং নৌ রুটের সর্দারঘাট ও মটবাড়িয়া, মনিপুর ও বাগী ঘাটের উভয় পাশ, কপোতাক্ষের মদিনাবাদ ঘাট হতে পাতাখালী পর্যন্ত, জায়গীর মহল হতে মদিনাবাদ পর্যন্ত, চালনা, দাকোপ, কামারখালী, বটবুনিয়া, কালিবাড়ি, আড়শিবসা, মংলা-চালনা, আংটিহারা-রায়মঙ্গল নৌ পথ, খুলনা-কালাবগী ও জয়মনিরগোল-সন্নাসী রুট।
পত্রটিতে আরও উল্লেখ করা হয়ম ‘ইতোপূর্বে একাধিকবার খননের আবেদন জানানো হলেও কোন কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়নি।’
এসব এলাকায় নৌ-যান চালু রাখতে নিয়মিত ড্রেজিং চালু বলে মনে করছেন বিআইডব্লিউটিএ কর্তৃপক্ষ।
সরকারি এ দপ্তরের উপ-পরিচালক মো. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘নৌ-রুটগুলো চালুর জন্য আমরা নাব্যতা বৃদ্ধিতে ড্রেজিং করার জন্য আবেদন জানিয়েছি। খুলনার অভ্যন্তরীণ নৌ-রুট ছাড়াও খুলনা-মংলা নদীপথ, খুলনা বরিশাল, খুলনা-বাগেরহাট, দৌলতপুর-গোপালগঞ্জ, টেকেরহাট-গোপালগঞ্জ রুটের যেসব এলাকা ড্রেজিং করা প্রয়োজন সেগুলোর জন্য প্রস্তাবনাও পাঠিয়েছি। অনুমোদন পেলে ড্রেজিং কার্যক্রম শুরু হবে।’
এ ব্যাপারে বিআইডব্লিউটিসির খুলনা ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের সভাপতি এসএম আছাদুজ্জামান বলেন, খুলনা নৌবন্দর থেকে এক দশক আগেও ১৯টি রুটে নৌযান চলাচল করত। বর্তমানে আর সে অবস্থা নেই। এখন মংলা বন্দর থেকে সরকারি খাদ্য ও সার ছাড়া কোন পণ্যই নৌপথে আসে না। নৌ-রুটগুলো চালু করতে পারলে এ অঞ্চলের অর্থনীতির চাকা আবার সচল হবে।